
ডেস্ক নিউজ : কিছুক্ষণ পরেই একটা বড় পাথর উপর থেকে গড়িয়ে নিচে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। এ দেখে তারা বলল যে, এ বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নেক আমলকে মাধ্যম বানিয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করো। সুতরাং তারা সব সব আমলের মাধ্যম বানিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলেন।
তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার অত্যন্ত বৃদ্ধ মা-বাবা ছিল এবং এও জানেন যে, আমি সন্ধ্যা বেলায় সবার আগে তাদেরকে দুধ পান করাতাম। তাদের পূর্বে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসী কাউকে পান করাতাম না। একদিন আমি গাছের খোঁজে দূরে চলে গেলাম এবং বাড়ি ফিরে দেখতে পেলাম যে মা-বাবা ঘুমিয়ে গেছে। আমি সন্ধ্যার দুধ দহন করে তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, তারা ঘুমিয়ে আছেন।
আমি তাদেরকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও পছন্দ করলাম না যে, তাদের পূর্বে সন্তান-সন্ততি এবং কৃতদাস-দাসীকে দুধ পান করাই। তাই আমি দুধের বাটি নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় তাদের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অথচ শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় আমার পায়ের কাছে চেঁচামেচি করছিল। এভাবে সকাল হয়ে গেল এবং তারা জেগে উঠল। তারপর তারা দুধ পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ আপনার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে পাথরের কারণে আমরা যে গুহায় বন্দী হয়ে আছি এ থেকে আপনি আমাদেরকে উদ্ধার করুন।’
এ দোয়ার ফলস্বরূপ পাথর একটু সরে গেল। কিন্তু এতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না। দ্বিতীয়জন দোয়া করল, ‘হে আল্লাহ! আমার একজন চাচাতো বোন ছিল। সে আমার কাছে সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তমা ছিল। অন্য বর্ণনা অনুযায়ী আমি তাকে এতো বেশি ভালোবাসতাম, যত বেশি ভালো পুরুষ নারীকে বাসতে পারে। একবার আমি তার সঙ্গে যৌন মিলন করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল।
সে যখন এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল, তখন সে আমার কাছে এলো। আমি তাকে এ শর্তে ১২০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম, যেন সে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। সুতরাং সে অভাবের তাড়নায় রাজি হয়ে গেল। অতঃপর যখন আমি তাকে কাছে পেলাম। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) যখন আমি তার দুইপায়ের মাঝে বসলাম, তখন সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় করো এবং অবৈধভাবে আমার পবিত্রতা নষ্ট করো না। সুতরাং আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম; যদিও সে আমার একান্ত প্রিয়তমা ছিল এবং যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে দিয়েছিলাম তাও পরিত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ আপনার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে আপনি আমাদের উপর পতিত বিপদ দূর করুন।’
পাথর আরও কিছুটা সরে গেল। কিন্তু এতে করে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না। তৃতীয়জন দোয়া করল, ‘হে আল্লাহ! আমি কিছু লোককে মজুর রেখেছিলাম। কাজ শেষ হলে আমি তাদের সবাইকে পারিশ্রমিক দিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন পারিশ্রমিক না নিয়ে চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিকের টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলাম। কিছুদিন পর তা থেকে প্রচুর অর্থ জমে গেল।
একদিন সে এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। আমি বললাম, এসব উট, গাভি, ছাগল এবং গোলাম (বাঁদি) যা তুমি দেখছো তা সবই তোমার পারিশ্রমিকের ফল। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সঙ্গে উপহাস করো না। আমি বললাম, আমি তোমার সঙ্গে উপহাস করিনি সত্য ঘটনাই বর্ণনা করছি। সুতরাং আমার কথা শুনে সে তার সমস্ত মাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে যে বিপদে আমরা পড়েছি তা তুমি দূর করো।’ এর ফলে পাথর সম্পূর্ণ সরে গেল এবং সকলেই (গুহা থেকে) বের হয়ে চলতে লাগল।(রিয়াজুস সালেহিন: ৫৪)
কিউটিভি/আয়শা/২১ অগাস্ট ২০২৪,/বিকাল ৫:১২