
স্পোর্টস ডেস্ক : ২০১৬ সালের কথা। বছরখানেক হয়েছে স্কালোনি মাঠ থেকে অবসর নিয়েছেন। একদিন শোনেন, আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন লিওনেল মেসি। সঙ্গে সঙ্গে টুইট করেন সে বছরের কোপা আমেরিকা ফাইনালের একটি ছবি। একা মেসিকে ঘিরে ধরেছেন বিপক্ষ দলের ৯ জন। লেখেন, ‘এই ছবিটিই সব বলে দেয়…তুমি যেয়ো না, লিও। ’
টুইটটি মেসি দেখেছিলেন কি না কে জানে। তবে সে যাত্রায় অবসর নেননি। ভাগ্যিস! নইলে যে বিশ্বকাপের ইতিহাসের পাতাগুলো নতুন করে লেখা হতো না। আর স্কালোনিও হতে পারতেন না বিশ্বজয়ী কোচ। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব একটা সুযোগ পাননি। অপ্রত্যাশিতভাবেই জায়গা করে নিয়েছিলেন ২০০৬ বিশ্বকাপে। মাঠে নেমেছিলেন মাত্র একটি ম্যাচে। সেটি ছিল আরো বড় চমক। রাউন্ড অব সিক্সটিনে মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলেন ম্যাচের শুরু থেকে। বদলি হিসেবে সেই ম্যাচে নেমেছিলেন মেসিও। ৮৪ মিনিটের মাথায়। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচটি আর্জেন্টিনা জেতে ২-১ গোলে।
সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে মাত্র সাত ম্যাচ খেলেছেন স্কালোনি। ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় খেলেছেন স্পেনের ক্লাব দেপোর্তিভো লা করুনায়। মাঝে কয়েক বছর ইংল্যান্ডে খেলেন ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ও রেসিং সান্তান্দারে। আর শেষবেলায় খেলেন ইতালিতে। লাজিওরু হয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন আটলান্টায়। মাঝে অবশ্য খেলেছিলেন স্পেনের মায়োর্কাতেও। বছরখানেক পরে নতুন পরিচয়ে যোগ দেন সেখানকারই অখ্যাত ক্লাব সন কালিউতে। প্রশিক্ষণ দিতেন বাচ্চাদের।
সত্যিকার অর্থে তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু আরো কয়েক মাস পরে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে। স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়াতে যোগ দেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলির সহকারী হিসেবে। পরের বছর জুনে সাম্পাওলি কোচ হন আর্জেন্টিনার। আর তাঁর সহকারী হিসেবে যোগ দেন স্কালোনি। তবে সেখানে সময়টা ভালো কাটেনি সাম্পাওলির। রাশিয়া বিশ্বকাপে হয় ভরাডুবি; এমনকি দিয়েগো ম্যারাডোনা পর্যন্ত বলেন, ‘গেলে আমি মোটরসাইক্লিং বিশ্বকাপ দেখতে যাব, ফুটবল বিশ্বকাপে নয়। ’ অবধারিতভাবে দায়িত্ব ছাড়তে হয় সাম্পাওলির। ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব পান তাঁর দুই সহকারী স্কালোনি ও পাবলো আইমার।
অবশেষে নভেম্বরে কোচ হিসেবে ঘোষণা করা হয় স্কালোনির নাম। এ নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়। দুই বছর আগে যিনি ছোটদের খেলা শেখাতেন, তাঁকে দেওয়া হলো আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের দায়িত্ব! সেসব শুনেও শোনেননি স্কালোনি। কারণ কথা তো সত্যি। তাঁর তো বলার মতো তেমন অভিজ্ঞতা নেই! বরং মন দেন কাজে। মেসির সঙ্গে তিনি নিজেও খেলেছেন। জানেন তিনি কত বড় তারকা। ‘আমি হয়তো তাকে অনুশীলন করানোর সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু তারও আগে আমি ওর ভক্ত। অন্য দেশের হয়ে খেললে আমি ওর খেলা দেখতে টিকিট কেটে যেতাম, ওর জার্সি কিনতাম। এমন কেউ আবার কবে আসবে কে জানে! তাই আমি ওকে খেলা উপভোগ করার সুযোগ দিই। ওর জন্য অন্য কিছু করার দরকার নেই,’ বলেন স্কালোনি।
তবে সেটি শুধুই খেলার স্বাধীনতা। তাঁর দলে কেউ বড়-ছোট নেই, এমনকি খেতে গেলেও সবাইকে এক টেবিলে বসতে হয়। নিয়ম একটিই, সবাই যেন সবার চোখের দিকে তাকাতে পারেন। এতে কাজও হয়েছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে আলবিসেলেস্তেদের এই দলটিই সবচেয়ে একতাবদ্ধ; এমনকি এ বছর লিয়েন্দ্রো পারেদেসের জন্মদিন উদযাপনে স্পেনের ইবিজায় উড়ে এসেছিলেন দলের ১৩ জন। সেই সঙ্গে কোচ হিসেবে স্কালোনি অর্জন করেছেন খেলোয়াড়দের অন্ধ আনুগত্য। “তিনি যদি সকাল ১০টায় আমাদের বলেন, ‘শুভ রাত্রি’, আমরা মেনে নেব তখন আসলেই রাত,” বলেন আর্জেন্টিনার অন্যতম মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পল।
এসবের মেলবন্ধনেই এসেছে স্কালোনির সাফল্য। এর আগে ২৮ বছরের খরা ঘুচিয়ে আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকা। এবার ৩৬ বছরের খরা ঘোচালেন তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতিয়ে। দেশটিতে তিনি এখন এমনই জনপ্রিয় যে মুখে মুখে বদলে গেছে আলবিসেলেস্তেদের নামও। সবাই এখন দলটিকে ডাকছে ‘স্কালোনেতা’ বলে। সোজা বাংলায়, স্কালোনির বাস। মেসির নেতৃত্বে যে বাস এখন দিগ্বিজয়ী।
কিউটিভি/আয়শা/২৭ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:০০






