
মাহবুব রহমান খান : কেউ ভোলেনা কেউ ভোলে
——————————————————-
একদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকম্পিত হত একটি স্লোগান। নয় জন ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ মানিনা বাতিল কর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ১৯৮৭ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বরে ১২ জন ছাত্রকে বহিস্কার করে। এরমধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলেরই ৯ জন ছাত্র বহিস্কার হলেন। এই নয় জন ছাত্রের মধ্যে সানাউল হক নীরু, গোলাম ফারুক অভি, মাহবুব খান, ইলিয়াস আলী, আব্দুল মালেক, কামরুজ্জামান রতন,খবির, শহীদ ও শফিক ছিলেন ।
এই নয়জন ছাত্রের মধ্যে তিনজন প্রয়াত হয়েছেন। একজন প্রায় এক দশক যাবৎ গুম হয়ে আছেন। একজন প্রবাসে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। বাকি চার জন দেশেই আছেন। কখনো কখনো এই সকল বড়ভাইদের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। স্মৃতির পরতে পরতে যুদ্ধদিনের কথা জানান দিয়ে যায়।
আজ দুপুরে হটাৎ করে ফোন করলেন জাকির হোসেন কামাল ভাই। বাংলাদেশে এডমিন ক্যাডারে যিনি ওএসডির সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছেন। প্রায় এক দশকের বেশি সময় যাবৎ তিনি ওএসডি, অপরাধ একটাই। ছাত্র জীবনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল করেছিলেন। মাহবুব ভাইকে নিয়ে তিনি অনেক স্মৃতিচারণ করলেন। মাহবুব ভাই এর সেল নাম্বার ও ফেসবুক লিংক দিলেন তিনি।
প্রায় ২৫ বছর পর খুঁজে পেলাম মাহবুব রহমান খান ভাইকে। ক্যাম্পাসের এক স্মার্ট, সুপুরুষ ছিলেন মাহবুব ভাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই নীরু ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন মাহবুব ভাই। ৮০ এর দশকে এক ঝাঁক তারুণ্যের উদ্দীপনায় ভরপুর কয়েকজন মেধাবী ছাত্র ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এর মধ্যে মাহবুব ভাই আসেন জগন্নাথ কলেজ থেকে।
আজকের বিএনপির মূল ভীত সৃষ্টিতে এই সকল দুঃসাহসী ছাত্রদল নেতাদের ভূমিকা মুখ্য ছিল।
১৯৮২ সালে একজন সাধারণ গৃহিনী থেকে বিএনপির হাল ধরা বেগম খালেদা জিয়া আর দুর্দমনীয় দুঃসাহসিক এই সকল ছাত্রনেতারই বিএনপির কান্ডারী ছিলেন। আজ শত বাধা বিপত্তি আর প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বিএনপি বহাল তবিয়তে টিকে থাকার পিছনে কাজ কাজ করে এর ভীত শক্ত বলে।
মাহবুব রহমান খান ছাত্রদলের রাজনীতি করতে যেয়ে ছাত্রত্ব শেষ করতে পারেননি। ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। দীর্ঘদিন মিথ্যা মামলা আর হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র মাহবুব রহমান খান ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৮৪ এর ব্যাচ।
আজ ফোনে অনেক কথা হলো মাহবুব ভাইয়ের সাথে। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সেই যুদ্ধদিনের কথা। আজ অনেকেই ভুলে গেছে সেই সকল আগুন ঝরা দিনের কথা। নিজ দলের অনেকেই ভুলে গেছে বিএনপির ভীত তৈরির কারিগর মাহবুব রহমান খান ভাইদেরকে। মাহবুব ভাই সম্পর্কে লিখতে যেয়ে আজ কবি নজরুল এর এই কবিতাটা মনে পড়ছে।
কেউ ভোলে না কেউ ভোলে
অতীত দিনের স্মৃতি।
কেউ দুখ লয়ে কাঁদে,
কেউ ভুলিতে গায় গীতি॥
কেউ শীতল জলদে
হেরে অশনির জ্বালা,
কেউ মঞ্জুরিয়া তোলে
তার শুষ্ক কুঞ্জ-বীথি॥
হেরে কমল-মৃণালে
কেউ কাঁটা কেহ কমল।
কেউ ফুল দলি চলে
কেউ মালা গাঁথে নিতি॥
কেউ জ্বালে না আর আলো
তার চির-দুখের রাতে,
কেউ দ্বার খুলি জাগে
চায় নব চাঁদের তিথি॥
লেখকঃ লুৎফর রহমান। রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট।
কিউটিভি/অনিমা/২২.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/ বিকাল ৩.০২