
খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : বড় বড় খেলোয়ারদের সাথে আমার খেলা হয়েছে। রাজ্জাক ভাই, নুরুল হক সিকদার, কর্নেল শওকত আলী ও এনামুল হক শামীমের সাথে খেলেছি। সবার সাথে খেলতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে খেলতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জণ করেছি। রাজ্জাক ভাই আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারী এবং আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী ছিলেন।
তার সাথে খেলতে গিয়ে শিখেছি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কিভাবে ভদ্রচিত্তে মোকাবেলা করতে হয়। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শাখা কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শনিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ এ কথা বলেন। সুন্দর আয়োজন করার জন্য আয়োজক নড়িয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সুজন বেপারীর প্রসংসা করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে তিনি আরো বলেন, ২০০১ এর নির্বাচনের পূর্বে আব্দুর রজ্জাক পানি সম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। আর সেই নির্বাচনে আব্দুর রাজ্জাক আমার প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। সেই নির্বাচনেও আমার ৫০ হাজার ভোট কাউন্ট না করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আমাকে ৯৭ হাজার ও রাজ্জাক ভাইকে ১ লাখ ১ হাজার ভোট দেখিয়ে ফলাফল ঘোষনা করেছিলেন।
তবুও রাজ্জাক ভাইর প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। কি কারণে শ্রদ্ধা আছে তা এই পরিসরে বলা ঠিক হবে কি না তা জানিনা। তবুও বলছি, রাজ্জাক ভাইয়ের এপিএস ছিলেন রশিদ গোলন্দাজ। সে আমার অফিসে গিয়ে ৩ ঘন্টা বসে ছিলেন। পরে জানায়, রাজ্জাক ভাই আমার সাথে কথা বলতে চায়। তখন রশিদ গোলন্দাজ তার ফোন দিয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের ফোনে কল করে আমাকে দেয়। অপর পাশ থেকে ফোন ধরে তার মিসেস। সে জানায় অনেক ক্ষণ তোমার ফোনের অপেক্ষায় থেকে তাকে ক্যামো থ্যারাপীর জন্য নিয়ে গেছে। পরে রাজ্জাক ভাইয়ের ম্যাসেজ ভাবি আমাকে জানন। তা ছিল ‘কিরণ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়’। রাজ্জাক ভাই কি ভুল করেছে তা সে আর আমি জানি। আমি তখন তাকে মাফ করে দিয়েছি আর আল্লাহর কাছেও বলেছি, তিনিও যেন মাফ করে দেন।
তিনি আরো বলেন, আরেক নির্বাচনে কর্ণেল শওকত আলী সাহেব আমার প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। সেই নির্বাচন চলাকালে আমি তার পা ধরে ছালাম করে জিজ্ঞেস করেছিলাম লিডার নির্মাচন কি ভাবে করবেন। শান্ত পরিবেশে নাকি অশান্ত পরিবেশে। অশান্ত পরিবেশে নির্বাচন করলে আমাকেও তো প্রস্তুতি নিতে হবে। তখন সে আমাকে বলেছিলেন ‘তুমি যে কথা বলেছ তার জন্য সাহস ও যোগ্যতা লাগে’। আমি জানি তুমি ভালো ছেলে। তাই নির্বাচন শান্ত পরিবেশে করব। পরে নড়িয়া-সখিপুরের আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সভাপতি সেক্রেটারীদের নিয়ে একসাথে বসে মিটিং করে সিদ্ধান্ত হয়। শওকত ভাই যেদিন নড়িয়ায় থাকতেন আমি সেদিন সখিপুরে আবার শওকত ভাই যেদিন সখিপুরে থাকতেন সেদিন আমি নড়িয়ায় থাকতাম। সিদ্ধান্ত হয়েছিল যার নেতৃত্বে অশান্ত পরিবেশের সৃষ্টি হবে তাকে দল থেকে বের করে দেয়া হবে। সেই নির্বাচনে কোন অশান্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়নি।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কিরণ বলেন, আমি বিশ্বাস করি বেগম জিয়া ১-২ মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাংলাদেশে আসবেন। তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন। শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ পাবে। আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। বিএনপির দূরদিনে যে পাহাড়ের মতো দাঁয়িয়ে ছিলেন তার মূল্যায়ন হবে। আমি ভয় পাওয়ার লোক না। আপনারাও ভয় পাবেন না। এই রাজনগরের রাস্তা ঘাটে আপনারা যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। নিজেরাই শক্তিশালী নিজেরাই বলিয়ান। কি ভাবে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে হয় তা আপনারা জানেন। গত ১৮ বছরের রাজনীতি আর এবারের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আছে। আমার বিশ^াস এবার আমাকে রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করার সাহস শেখ হাসিনারও নাই।
আমার ভুল থাকতে পারে। আমার ভুলের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন না। আমার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার অনেক জায়গা আছে। আপনাদের সহযোগিতা থাকলে নড়িয়া-সখিপুরকে নিয়ে আমার যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন করতে পারব। এর পূর্বে আমরা অনেক বার চেষ্টা করেছিলাম রাজনগরে একটা মিটিং করব। বিগত ১৭ বছরে তা সম্ভব হয়নি। ২০০৮ এর নির্বাচনে আমাকে সবচেয়ে বেশী ভোট দিয়েছিলেন। রাজনগরে আমার একটা সভা করার সুযোগ হয়েছিল। সেই সভায় মা-বোনেরাসহ সকলে মাঠে নেমে এসেছিলেন। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে বিএনপির প্রতি ভালোবাসা প্রমান করেছিলেন। এনএসআই ও ডিজিএফআইর রিপোর্ট অনুযায়ী আমার ৩০ হাজার ভোট বেশি ছিল। তবুও আমি নির্বাচিত হতে পারিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনির ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল মাঝি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাসেল হাওলাদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা শাহিন মোল্যা, সুলতান মাহমুদ, উপজেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক খোকন মাদবর, উপজেলা স্বেচ্ছাসেক দল সভাপতি উজ্জল শরীফ, রাজনগর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ছাত্তার আকন, দাদন মীর মালত, নেছার মেলকার, শাজাহান কাজী, ইউনিয়ন যুবদল নেতা আক্কাস মালত, জাকির মুছল্লি, ছালাম মালত, শাকাওয়াত ভুইয়া, মাইনুল মীরবহর, কামরুল মীরবহর, রুবেল কাজী, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা পারভেজ দেওয়ান, সজিব মাদবর, রাসেল মাদবর প্রমূখ।
কিউটিভি/আয়শা/১২ জানুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৪:০০