ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রামের খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক তিন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু কুড়িগ্রামে পরপর ৬ ডিসির মধ্যে ৪ জনই নারী ডিসি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ গাজী মাজহারুল আনোয়ার : তুমি সুতোয় বেধেছ শাপলার ফুল নাকি তোমার মন ‘নবীন বরণ ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হলো ড্যাফোডিল পলিটেকনিকে যমুনায় ৮ দলের প্রতিনিধি, আশপাশ এলাকায় নেতাকর্মীরা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন হুমায়ুন কবির  মেয়েকে ধর্ষণ, নরপিশাচ পিতার কারাদণ্ড কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায়

কোরআন ও বিজ্ঞান : একটি পর্যালোচনা

Anima Rakhi | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০৮:০৪:১৪ এএম

ডেস্ক নিউজ : ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ সত্য হলো—ধর্ম ও জ্ঞান পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, বরং জ্ঞানই ধর্ম এবং ধর্মই জ্ঞান। ইসলামে জ্ঞান ও জ্ঞানীদের প্রতি যে গভীর সম্মান প্রদর্শিত হয়েছে, তা সুদূরপ্রসারী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতারা এবং জ্ঞানীরাও (এ কথার) সাক্ষ্য দেয় যে তিনি ন্যায়বিচারসহ তাঁর সৃষ্টিকে পরিচালনা করেন।

তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ১৮)
আল্লাহ আরো বলেন, ‘তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে শুধু জ্ঞানীরাই আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৭-২৮)

তাই তো ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, ‘বিশুদ্ধ জ্ঞান ও সঠিক যুক্তির মধ্যে কখনো বিরোধ থাকতে পারে না।’
কোরআনের বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতা অস্বীকারকারীদের যুক্তি

১. অলৌকিকতা শুধু ভাষাগত হতে হবে : তাদের মতে, কোরআনের অলৌকিকতা বলতে শুধু ভাষার সৌন্দর্য, শৈলী ও বর্ণনাভঙ্গিই বোঝায়; বৈজ্ঞানিক দিক নয়।

২. কোরআন হেদায়েতের বই, বিজ্ঞানগ্রন্থ নয় : তাদের দাবি—কোরআন মানবতার পথনির্দেশের জন্য নাজিল হয়েছে, বৈজ্ঞানিক পাঠ্যবই হিসেবে নয়।

৩. বৈজ্ঞানিক তথ্য পরিবর্তনশীল : বিজ্ঞানে অনুমান ও তত্ত্ব থাকে, যেগুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই বৈজ্ঞানিক ধারণা দিয়ে কোরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করলে ভবিষ্যতে পাঠের ব্যাখ্যা সংকটে পড়তে পারে।

তবে নিঃসন্দেহে এই কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ অলৌকিক দিকগুলোর একটি হলো এর গ্রাফিক বা বিন্যাসগত অলৌকিকতা অর্থাৎ শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, শৈলী, বর্ণনার ক্রম এবং সামগ্রিক কাঠামোর এমন এক অনন্য সমন্বয়, যা সম্পূর্ণ কোরআনজুড়েই সমানভাবে বজায় রয়েছে। এই বিন্যাস, সামঞ্জস্য ও গঠন এমন নিখুঁত যে তা মানুষের পক্ষে অনুকরণ করা অসম্ভব। এবং যদি এই অলৌকিকতা একটি স্বতন্ত্র বিন্যাসগত সিস্টেম বা শৈলী ব্যবস্থার ফল হয়, তবে এটি শুধু আরবদের বোঝার জন্য সীমাবদ্ধ হতে পারে না; বরং মানবজাতির জন্য সর্বজনীন এক চ্যালেঞ্জ। আরো উদাহরণ—আল্লাহ বলেন, ‘আর মূর্খদের সেই সম্পদ দিয়ো না, যা আল্লাহ তোমাদের জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তোমরা তাদের খাওয়াও, পোশাক দাও এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫)
এর অর্থ হলো—এদের জীবিকা যেন নিজেদের হাতের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে না আসে, বরং সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বশীল তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত।

যাঁরা কোরআনে বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতার ধারণার বিরোধিতা করেন, তাঁরা মনে করেন—কোরআনের শব্দ ও বক্তব্যকে তার নাজিল-সময়ের ভাষাগত পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতেই হবে। তাঁদের যুক্তি হলো, পূর্বসূরি আলেমরা যখন কোরআন ব্যাখ্যা করেছেন, তাঁরা আরবি ভাষার প্রচলিত অর্থের ওপর ভিত্তি করেই ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাকে তাঁদের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। তবে তাঁরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য উপেক্ষা করেন। কোরআন নাজিল হয়েছে পূর্ণ ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের সঙ্গে অর্থাৎ আল্লাহর জ্ঞান এবং তাঁর সৃষ্টি-বিস্তারের নিখুঁত আইনগুলোর আলোকে। সুতরাং কোরআনে এমন অনেক ইঙ্গিত থাকা স্বাভাবিক, যার গভীরতা পরবর্তী যুগের মানুষ ধীরে ধীরে উপলব্ধি করবে। বিরোধীরা আরো বলেন, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো পরিবর্তনশীল। তাই সেগুলোর সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক করা উচিত নয়, যাতে ভবিষ্যতে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো বিরোধ তৈরি না হয়। এ বক্তব্য আংশিকভাবে ঠিক—অনুমাননির্ভর বিজ্ঞান সত্যিই পরিবর্তনশীল এবং তা দিয়ে কোরআনকে ব্যাখ্যা করা ঠিক নয়। কিন্তু পরীক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক বিজ্ঞান—এটি কোরআনের বিরোধিতা করতে পারে না, বরং কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যদি কোরআনের কোনো আয়াতের ব্যাখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে সেটি কোরআনের সত্যতার আরো একটি প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এ বিষয়ে দুটি উদাহরণ :

প্রথম উদাহরণ : ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব ও কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি

ধরা যাক, ডারউইনের জৈব বিবর্তনবাদী তত্ত্বটি আবির্ভাবের আগে কিংবা পরে কোরআনের আয়াতের আলোকে বিচার করা হতো— তাহলে গত দেড় শ বছর ধরে এই তত্ত্ব ঘিরে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, মানবজাতি তার অনেকটাই থেকে মুক্ত থাকতে পারত। ডারউইনের মূল দাবি ছিল—এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির উদ্ভব ঘটে দীর্ঘ প্রজনন ও রূপান্তরের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এমন আন্তঃ প্রজাতিক রূপান্তর কখনোই ঘটেছে বলে প্রমাণিত নয়। বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে—প্রতিটি প্রজাতি তার সীমানার মধ্যেই থেকে যায়; এক প্রজাতি অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয় না। এখন যদি এই বিবর্তনতত্ত্বটি কোরআনের সেই আয়াতগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে আল্লাহ তাআলা ‘জোড়া হিসেবে সৃষ্টি’র কথা বলেছেন, তবে তত্ত্বটি টিকেই থাকতে পারে না। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এটি সৃষ্টির স্বতন্ত্রতা এবং প্রতিটি প্রজাতির নিজস্ব পরিচয়ের বাস্তব প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি সবকিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করো।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৪৯)

দ্বিতীয় উদাহরণ : বিগ ব্যাং তত্ত্ব ও কোরআনের সামঞ্জস্য

এবার এমন একটি উদাহরণ দেখা যাক, যেখানে আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব কোরআনের বর্ণনার সঙ্গে গভীরভাবে সংগতিপূর্ণ। এটি হলো বিগ ব্যাং তত্ত্ব—মহাবিশ্বের সূচনাবিষয়ক আধুনিক মহাজাগতিক ধারণা। তত্ত্বটির নাম যাই হোক—‘বিগ ব্যাং’, ‘প্রাইমিভাল অ্যাটম’, ‘কসমিক এগ’ বা অন্য কোনো শব্দ—মূল বক্তব্য হলো : মহাবিশ্ব একসময় একটি সীমাবদ্ধ, সংকুচিত অবস্থায় ছিল; এরপর এক মহাবিস্ফোরণ ঘটল; তারপর শুরু হলো দ্রুত স্ফীতি (রহভষধঃরড়হ); এবং এখনো পর্যন্ত মহাবিশ্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এবার এগুলোকে কোরআনের আলোকে তুলনা করলে আমরা বিস্ময়কর সামঞ্জস্য দেখতে পাই—

১. মহাবিশ্বের প্রথম অবস্থা : ‘একত্রে সংযুক্ত’ বিগ ব্যাং বলে—সমস্ত আকাশ-পৃথিবী এক বিন্দুতে, অত্যন্ত ঘন এবং সংকুচিত অবস্থায় ছিল। কোরআন বলছে—‘আকাশ ও পৃথিবী একত্রে সংযুক্ত ছিল, তারপর আমরা তাদের পৃথক করে দিয়েছি।’

(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)

২. মহাবিশ্বের ক্রমাগত সম্প্রসারণ : বিগ ব্যাং তত্ত্বের আরেকটি ভিত্তিমূলক সত্য হলো—মহাবিশ্ব এখনো প্রসারিত হচ্ছে। কোরআন ১৪০০ বছর আগে এই প্রসারণের কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে—‘আকাশ আমরা শক্তি দিয়ে নির্মাণ করেছি এবং নিশ্চয়ই আমরাই তা ক্রমাগত প্রসারিত করছি।’

(সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৪৭)

সুতরাং, বিগ ব্যাং তত্ত্ব কোরআনের সঙ্গে বিরোধিতা নয়, বরং তার এক অনন্য বৈজ্ঞানিক সামঞ্জস্যের প্রমাণ।

অতএব, কোরআনের বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতার প্রেক্ষাপটে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা মানে এগুলোর সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই করা। যাঁরা কোরআনিক বৈজ্ঞানিক ইশারার পক্ষে যুক্তি দেন, তাঁরা বলেন, কোরআন ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ—সবকিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করে এবং যে বিষয়গুলো একটি সাধারণ কোরআনিক পাঠ্যের আওতায় পড়ে, সেগুলো কোরআনে মূলত প্রোথিত।

তাঁরা আরো যুক্তি দেন যে কোরআন সব মানুষের জন্য প্রমাণস্বরূপ—চাই সে আরব হোক বা অনারব এবং কোরআনের অলৌকিকতা শুধু ভাষার বাগ্মী আরবদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। তাঁরা এটিও উল্লেখ করেন যে কোরআনে মহাবিশ্ব সম্পর্কিত বহু আয়াত আছে, যা মানবজাতিকে চিন্তা করতে আহবান জানায়।

অধ্যাপক আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ জোর দিয়ে বলেছেন, ‘পবিত্র কোরআনকে বোঝা এবং আমাদের যুগের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি থেকে উপকৃত হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। তবে তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করেন যে প্রতিটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে পরম সত্য হিসেবে ধরে নেওয়া এবং সেটিকে কোরআনের অর্থের ওপর চাপিয়ে দেওয়া গুরুতর ভুল।’

অনিমা/ ০১ ডিসেম্বর ২০২৫,/সকাল ৭:৪৭

▎সর্বশেষ

ad