ফরিদপুরে হুমায়ূন কবির সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৩ জন

Ayesha Siddika | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ১১:৩৯:১৫ পিএম

ডেস্ক নিউজ : ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হুমায়ূন কবির সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ এর আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনজনই উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে এই তিন ব্যক্তির কর্মপরিধি সম্পর্কে প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। পরে তাদের হাতে পর্যায়ক্রমে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

পুরস্কার পাওয়া ড. মোহাম্মদ আলী খান একজন কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, ভ্রমণকাহিনী ও শিশুতোষ গ্রন্থের প্রণেতা এবং একজন গবেষক। তার অক্লান্ত শ্রমনিষ্ঠ ‘বর্ণে শব্দে চিত্র: ফরিদপুর’ বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঠক সমাজকে অভিভূত ও উচ্ছ্বসিত করেছে। এছাড়া তার লেখায় অনবদ্য ভঙ্গিমায় চিত্রিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, প্রকৃতির প্রতি অফুরান ভালোবাসা ও শাশ্বত মানবপ্রেম, বর্ণ ও শব্দের সুঁই-সুতোয় কাগজের নকশীকাথায় ফুটিয়ে তুলছেন। বই রচনার পাশাপাশি তিনি একাধিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার কাজেও যুক্ত ছিলেন।

কথাসাহিত্যিক তাপস কুমার দত্তের মহাপৃথিবীর অন্ধকার ঘাসে উপন্যাস বিস্ময়করভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজনৈতিক পাঠকে। যেখানে প্রতিকীভাবে এক ন্যানো এলিয়েনের আশ্রয় ঘটেছে। বিচিত্র কৌশলে উঠে এসেছে বাংলাদেশের আবহমান রাজনৈতিক বাস্তবতার কঠিন বয়ান। উপন্যাসের পাশাপাশি রয়েছে তার গল্প সংকলন। এছাড়াও তাপস কুমার দত্ত দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক ও একজন চলচ্চিত্রকার।

সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম ২০০৬ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দেশের প্রথম ২৪ ঘণ্টার সংবাদ টেলিভিশন চ্যানেল সিএসবি নিউজ এ শুরু হয় তার পেশাজীবন। বর্তমানে তিনি প্রথম আলো পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। দেশের সৃজনশীল সংস্কৃতি মাধ্যমে দুর্নীতি ও উপকূলে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব নিয়ে রয়েছে তার অসামান্য প্রতিবেদন। তার প্রতিবেদনে সুন্দরবনের সবচেয়ে দুর্গম এলাকার চিত্র উঠে এসেছে। তিনি ২০১৮ সালে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ-ভারত’ কথাসাহিত্য পুরস্কার।

অনুষ্ঠানের সন্মানিত অতিথি দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের বাঙালির যে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস ও কিছু মানুষ ছিল তাদের আমরা জনসম্মুখে, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখিনা। ঠিক সেই মুহূর্তে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ যেটি করেছে সেটাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করবে, বাংলাদেশ আবার মাথা তুলে দাড়াবে। কাজেই, আমাদের যার যতটুকু শক্তি আছে সে শক্তি নিয়েই ভালো কাজের সাথে থাকব।’ 

তিনি হুমায়ূন কবিরের পরিবারের নারী সদস্যদের কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা এখনো আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে জালাল আহমেদ হুমায়ূন কবিরের বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন কবির ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা ও একজন মহাপুরুষ। তিনিই একমাত্র অক্সফোর্ড থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং দর্শনে অনার্স করেছেন যা উপমহাদেশে প্রথম ছিল। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রগৌতিশীল ছিলেন।

তিনি ভারতের দুইবার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, যা এখনও ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যাবে। পাশপাশি তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন, তিনি ৪৭টি বই লিখেছেন। তার লেখা নদী ও নারীর কথা বেশ আলোচিত। আমরা এতটুকু দিয়ে হুমায়ূন কবিরকে পরিমাপ করার চেষ্টা করি। কিন্তু এর বাইরে যে হুমায়ুন কবিরের পরিচিত আছে সেটা আমরা লক্ষ করি না। ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদকে ধন্যবাদ জানাই যে এই বিখ্যাত মানুষটিতে নতুন করে তুলে আনার জন্য।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি প্রফেসর আলতাফ হোসেন, সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলনসহ সাহিত্যপ্রেমীরা। হুমায়ূন কবির ফরিদপুর সদরের কোমরপুর গ্রামে ১৯০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুরের অনন্য মাত্রার শিল্পীপুরুষ, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও রাজনীতিক ছিলেন।

১৯৩৯ সালে জমিদারপুত্র আবদ আল্লাহ জহীরউদ্দিন লালমিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ। এ সাহিত্য পরিষদের আমন্ত্রণে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফরিদপুর এসেছিলেন সাহিত্য সভায় যোগ দিতে। হুমায়ূন কবীর দুই দফায় ভারতের শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রীও। ১৯৬৯ সালে মহৎপ্রাণ এ মানুষটি ইহকাল ত্যাগ করেন।

 

 

কিউটিভি/আয়শা/৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫,/রাত ১১:৩৪

▎সর্বশেষ

ad