
মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ভুয়া দলিলের মাধ্যমে নামজারি তৈরি করে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের জমি জালিয়াতি মামলায় মনোহরদিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (তহশিলদার) মেসবাহুর রহমানকে (৫৫) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. ফজলে এলাহী খান তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের সরকারি কৌঁসলি অ্যাডভোকেট প্রণব কুমার নন্দী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শাহ মেসবাহুর রহমান কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্বাচারা গ্রামের মৃত শাহ উজির উদ্দিনের ছেলে। তিনি হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের তহশিলদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং বর্তমানে মনোহরদিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত আছেন। হরিনারায়ণপুরে কর্মরত থাকালে তিনি ওই জালিয়াতি করেন।এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার লাহিনী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে শামসুল ইসলাম (৩০), একই গ্রামের আক্তার খায়ের ছেলে সাদ্দাম খা (৩০) এবং দুর্বাচরা গ্রামের শাহ খলিলুর রহমানের ছেলে শাহ ইউসুফ হোসাইন (৩২)।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার মেসবাহুর রহমানের যোগসাজশে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে প্রায় ২৮ বিঘা জমি জবরদখলের চেষ্টা করে এই চক্রটি । জমি জালিয়াতির ঘটনায় গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে ভুক্তভোগীদের বাসার কর্মচারী এস এম জিয়াউর রহমান (৪১) ও তার প্রথম স্ত্রী সুমনাকে (৩২) গ্রেফতার করে কুষ্টিয়ার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা উভয়ে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেন।
ভুক্তভোগীরা হলেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের বেড়বাড়াদী গ্রামের মৃত নিয়ামত আলী শেখের মেয়ে জামিলা নাহার শেখ ও জুবাইদা নাহার শেখ। জুবাইদা নাহার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এবং জামিলা নাহার সরকারি চাকরিজীবী। তিনি বর্তমানে ঢাকার গুলশানে বসবাস করেন।জানা গেছে, ভূমি অফিস ও তহসিল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে নামজারি তৈরি করে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও সরকারি চাকরিজীবী দুইবোনের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২৮ বিঘা পৈতৃক জমি ও পেট্রল পাম্পের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের চেষ্টা করেন অভিযুক্তরা। তাদের বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সূত্রে ওইসব জমির মালিক হন ভুক্তভোগী দুই বোন।
দীর্ঘদিন ধরে তারা ওই জমি ভোগদখলে করে আসছিলেন। কিন্তু আসামিরা গায়ের জোরে এই সম্পত্তি দখল নিতে চেষ্টা করলে বিচারের আশায় ভুক্তভোগী দুইবোন আদালতের দ্বারস্থ হন। এ নিয়ে আদালতে সাতটি মামলা চলমান। ভুক্তভোগীদের মধ্যে একবোন বলেন, দীর্ঘদিন জমি, বাড়ি ও পেট্রল পাম্প আমরা ভোগদখল করে আসছি। সবকিছু জালিয়াতি চক্র দখলের চেষ্টা করছে এবং পেট্রোল পাম্প বিক্রি করেছেন। তারা সব সময় নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে আমাদের। মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে ভূমি কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত রয়েছেন। আমরা অপরাধী চক্রের সঠিক বিচার চাই।
পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শহীদ আবু সরোয়ার বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলাটি কুষ্টিয়া পিবিআই অনুসন্ধান শুরু করে। মামলাটির অনুসন্ধানকালে কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে আসে সাপ। কথিত দলিলদাতা হিসেবে ওই দুইবোনের সই জাল করার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। দুইবোনের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দীর্ঘ ২৩ বছরের বিশ্বস্ত কর্মচারী এস এম জিয়াউর রহমান তার প্রথম স্ত্রী সুমনাকে বিক্রেতা সাজিয়ে গুলশানের একটি বাড়িতে জালিয়াত চক্রের উপস্থিতিতে একজনকে দিয়েই দুই দাতার সই করান। এরপর জালিয়াত চক্র জমির নামজারি সম্পন্ন করে। তারপর চক্রের সদস্য ও দলিল গ্রহীতারা কয়েকগুণ দামে পেট্রোল পাম্পসহ জমি বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনার সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
কিউটিভি/অনিমা/১৩ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১২:২৪