ব্রেকিং নিউজ
‘নবীন বরণ ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হলো ড্যাফোডিল পলিটেকনিকে যমুনায় ৮ দলের প্রতিনিধি, আশপাশ এলাকায় নেতাকর্মীরা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন হুমায়ুন কবির  মেয়েকে ধর্ষণ, নরপিশাচ পিতার কারাদণ্ড কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম

আফগান-পাকিস্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

Ayesha Siddika | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ - ০৮:৩৩:২৪ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে দফায় দফায় শান্তি আলোচনা করছিল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শুক্রবারও কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় বৈঠকে বসেছিল দুই দেশ। বরাবরের মতো কোনো সমাধান ছাড়াই এ দিনও ভেস্তে যায় আলোচনা। এতে আবারও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়ছে আফগান-পাকিস্তান। তবে সর্বশেষ আলোচনা ব্যর্থ হলেও যুদ্ধবিরতি অক্ষুণ্ন থাকবে বলে জানিয়েছে তালেবান সরকার। এদিকে আলোচনার ব্যর্থতার জন্য দুই পক্ষই একে অপরকে দায়ী করছে। 

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বহুকাল ধরেই জটিল ও উত্তেজনাপূর্ণ। ইতিহাসের শিকড় থেকে জন্ম নেওয়া সীমান্ত বিরোধ, বিশেষ করে ডুরান্ড লাইন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিভেদ, আজও দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস ও উত্তেজনার মূল কারণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোর সীমান্ত সংঘাত, বিমান হামলা এবং জঙ্গি কর্মকাণ্ড এই বিরোধকে আরও তীব্র করেছে। গত মাসের হামলার পর এই দুই প্রতিবেশী দেশের আবারও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে। কেবল সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা নয়, বরং মানবিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জও সমানভাবে গুরুত্ব বহন করছে। আঞ্চলিক শক্তিগুলো ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো শান্তি আলাচনা প্রক্রিয়ার দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবার আশঙ্কা, এ সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশকে শান্তির জন্য একটি টেকসই কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস বহু পুরোনো। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভুল তথ্য ও প্রচারণায় আরও তীব্র হয়েছে। গত আট দশক ধরে আফগান ও পাকিস্তানি নেতৃত্ব এই ঐতিহাসিক জট ছাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।

জঙ্গিবাদ ও নিরাপত্তা ইস্যু

পাকিস্তান অভিযোগ করে, আফগানিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে। যারা গত দশকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে। কাবুল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, পাকিস্তান দোষ চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে এবং আফগান ভূখণ্ডে হামলা অব্যাহত রাখছে। আফগান সরকারের দাবি, সমস্যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে উদ্ভূত। আফগানিস্তান জঙ্গিদের কোনো সহায়তা দেয় না বলেই জানায় দেশটি।

ডুরান্ড লাইন বিতর্ক

১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ রাজ ও আফগান শাসকের মধ্যে ২,৬৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুরান্ড লাইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে পাখতুন ও বেলুচ জাতিগোষ্ঠীর ভূমি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯১৯ সালে স্বাধীনতার পর আফগানিস্তান এটিকে কার্যকর সীমারেখা হিসাবে মেনে নিলেও এর বৈধতা নিয়ে আপত্তি জানায়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান গঠিত হলে, এই সীমান্ত উত্তরাধিকারসূত্রে পাকিস্তানের কাছে আসে। তবে আফগানিস্তানের দাবি, ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ায় সেই চুক্তি আর বৈধ নয়।

আফগানিস্তান এটিকে উপনিবেশিক উত্তরাধিকার হিসাবে স্বীকার করে না। গত ৭৫ বছরে সীমান্ত সংঘর্ষে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন হাজারো মানুষ। দুইবার (১৯৫৫ ও ১৯৬১) কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। এই বিতর্ক শুধু নিরাপত্তা নয়, বাণিজ্য, অর্থনীতি ও শরণার্থী সমস্যাকেও জটিল করেছে।

পাকিস্তানের নতুন নিরাপত্তা নীতি

এই সহিংসতার মূল কারণ পাকিস্তানের নতুন নিরাপত্তা নীতি। এই নীতি অনুযায়ী, পাকিস্তানে যদি কোনো হামলা হয় (টিটিপি বা বেলুচ গোষ্ঠী দ্বারা), তবে আফগানিস্তানের ভেতরে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হবে। এই ভুল ধারণা আরও সংঘাত উসকে দিতে পারে। এজন্য দুই দেশের শান্তি আলোচনা জরুরি। অন্যদিকে পাকিস্তানের তোরখাম ও চামান সীমান্ত বন্ধ থাকায় বাণিজ্য ও মানবিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ভুল বোঝাবুঝি দ্রুত সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। সীমান্ত বন্ধের ফলে দুই দেশেই খাদ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। 

লেখক পরিচিতি: আফগানিস্তানের কার্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান। ২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতা দখলের পর দেশ ছেড়ে জার্মানির মিউনিখে  বসবাস করছেন।

 

 

আয়শা/১২ নভেম্বর ২০২৫,/রাত ৮:৩০

▎সর্বশেষ

ad