সিলভিয়া ও জাস্টিন ট্রুডোর বাংলাদেশ ভাবনা

superadmin | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ - ১০:০৬:১৫ পিএম

সিলভিয়া ও জাস্টিন ট্রুডোর বাংলাদেশ ভাবনা
——————————————————–
সিলভিয়ার বাবা এডরুক প্যাটারসন এবং পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো খুব ঘনিষ্ট দুজন বন্ধু। ৭০ দশক পরবর্তী এডরুক প্যাটারসন আধুনিক কানাডার অবকাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন। আধুনিক নগরায়নের জন্যে তার ডেভলাপার কোম্পানি ব্যাপক কাজ করেন। বিশেষ করে হ্যালিফ্যাক্স নগরী নির্মাণে এডরুক প্যাটারসন স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন।

পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডোকে আধুনিক কানাডার শাসক হিসাবে অবহিত করা হয়। জোসেফ ফিলিপ পিয়ের ইভেস এলিয়ট ট্রুডো যিনি পিয়ের ট্রুডো বা কেবল পেট নামে পরিচিত। পেট একজন কানাডীয় রাজনীতিবিদ। কানাডার ১৫ তম প্রধানমন্ত্রী (১৯৬৮-১৯৭৯ এবং ১৯৮০-১৯৮৪)। কানাডার প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় তিনি তৃতীয় সবচেয়ে বেশি দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, উইলিয়াম লিওন ম্যাককেঞ্জি কিং এবং জন এ ম্যাকডোনাল্ড এর পেছনে ১৫ বছর, ১৬৪ দিনের জন্য।

কুইবেক আইনজীবী, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সক্রিয় কর্মী হিসেবে ট্রুডো প্রধান হয়ে উঠেছেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি লিবারেল পার্টি অফ কানাডা যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ফেডারেল রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি লেস্টার বি পিয়ারসন সংসদীয় সচিব এবং পরে তার বিচারপতি (কানাডা) বিচারপতি মন্ত্রী হন। ট্রুডো একটি বিতর্কিত প্রতীক “ট্রুডুউমনিয়া” এবং ১৯৬৮ সালে লিবারেলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত থেকে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, তার ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন যা আগে কখনোই কানাডিয়ান রাজনৈতিক জীবনে দেখা যায়নি। তার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সত্ত্বেও, “আবেগ আগে কারণ” তার ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক কর্মজীবন সমগ্র কানাডায় পোলারাইজিং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

সিলভিয়ার ক্যাডিলাক ছুটছে। অগ্রসরমান সিকিউরিটির গাড়িও ছুটছে। এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে ছুটছে গাড়ী। সিলভিয়া যেতে যেতেই চলে গেল সুদূর এক অতিতে, ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালের ২৩ শে জুলাই কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো ও তার স্ত্রী মার্গারেট সিনক্লেয়ার দম্পতির পরিবারে নতুন সদস্য আসছে মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে প্রিয় বন্ধু এডরুক প্যাটারসন ছুটে এসেছে অটোয়ার ৪০ নং ওয়েলিংটন স্ট্রিটে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সাথে এসেছে ৫ বছরের শিশু সিলভিয়া প্যাটারসন।

এদিকে সারাদেশের জুয়াড়িরা পার্লামেন্ট হিলে বাচ্চার সম্ভাব্য জন্মদিন নিয়ে বাজি ধরা শুরু করে দেয়। বড়দিনের দিন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর অটোয়া সিভিক হাসপাতালে স্থানীয় সময় ৯টা বেজে ২৭ মিনিটে জাস্টিন ট্রুডো জন্মগ্রহণ করেন।.সেই আমলের কানাডার অন্য সকল হাসপাতালের মতো বাচ্চা ডেলিভারির রুমে বাবাদের উপস্থিত থাকার নিয়ম ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডোর স্ত্রী মার্গারেট সিনক্লেয়ার এই নিয়মের বিরোধিতা করেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ম পাল্টাতে বাধ্য হন। এরপর থেকে কানাডার অন্য হাসপাতালগুলোতে উক্ত নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়। বরাবরই সেদিনও প্যাটারসন পরিবারও হাসপাতালে অবস্থান করছিল। জাস্টিন ট্রুডোর ছোটভাই আলেক্সান্ডার ও মিচেল এর জন্মের সময়ও সিলভিয়া ও এডরুক প্যাটারসন উপস্থিত ছিল। পুরোনো দিনের কথা ভাবছে সিলভিয়া।

সিলভিয়ার গাড়ী ঢুকে পড়ল অটোয়া, ON K1A 0A2 এর 80 ওয়েলিংটন স্ট্রিট এ কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এই জায়গাটি সিলভিয়ার কাছে প্রিয় এক চারণভূমি। শৈশব থেকে আজ অবধি এই জায়গাটি সিলভিয়ার কাছে পারিবারিক এক মিলনমেলা যেন। সিকিউরিটি সিস্টেম শেষ করে সিলভিয়া প্রবেশ করল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অফিস কক্ষে। সিলভিয়াকে দেখেই নিজ আসন থেকে উঠে এসে সিলভিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরল। এ যেন দীর্ঘদিন পর আপন ভাইবোনের এক মহামিলন।

কুশলাদি বিনিময়ের এক পর্যায়ে কথা প্রসঙ্গে সিলভিয়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে জানাল, আমি বাংলাদেশ যাচ্ছি। কথাটা তোমাকে জানিয়ে রাখলাম। ট্রুডো বলল, তুমি স্টেট্ গেস্ট হয়ে বাংলাদেশ যাও। আমি সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তাছাড়া তুমিতো ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির একজন এডভাইজর। সিলভিয়া হেসে জবাব দিল, না থাক। দরকার নেই। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত সফর। পারলে ইকোনোমি ক্লাসে আমি ফ্লাই করব।

সব শুনে জাস্টিন ট্রুডো বাংলাদেশ নিয়ে নাতিদীর্ঘ এক ভাষণ দিয়ে ফেলল। বাংলাদেশ ও তার জন্ম সম্পূরক একটি বিষয়। ৯ মাস স্বাধীনতা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ ৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় লাভ করে আর এর ৮ দিন পরেই আমার জন্ম। ১৯৭১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমার বাবা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন প্রদান করেন ও এতে বিশেষ অবদান রাখেন।

ট্রুডো আরও বলেন, সেসময় তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে দৃঢ়ভাবে কথা বলেন। এ জন্য আমার বাবাকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে মরণোত্তর ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ প্রদান করে। স্বাধীন হওয়ার পর যে কয়টি দেশ প্রথম দিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, তার মধ্যে তার দেশ কানাডা অন্যতম। কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য লাভের ব্যাপারে বাবা দৃঢ় সমর্থন দেন।

পরিশেষে জাস্টিন ট্রুডো সিলভিয়া প্যাটারসনকে বললেন, তুমি যাচ্ছ যাও। এ মুহুর্তে বাংলাদেশে মেজর কিছু পলিটিকাল ক্রাইসিস নিয়ে হোয়াইট হাউস সহ আমাদের কমনওয়েলথ দেশ সহ বন্ধু দেশগুলো কাজ করছে। প্রয়োজনে আমরাও সরাসরি ভূমিকা রাখব। বাংলাদেশে তোমার সফর হোক আমাদের কর্মকান্ডের নন অফিসিয়াল এক সূচনা।

সিলভিয়া ছোটভাই, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কথায় সায় দিয়ে বিদায় নিল ৪০ নং ওয়েলিংটনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।

পর্ব-৩

পাদটীকাঃ সিলভিয়া প্যাটারসনের সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাক্ষাৎ পর্বটি অতিপ্রাকৃত এবং ফ্যান্টাসি ভাবনার এক চিত্র মাত্র।

 

লেখকঃ লুৎফর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র লুৎফর রহমান ৮০ এর দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে দুটি রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন, যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে তিনি এখন ব্যাপক পরিচিত।

 

কিউএনবি/বিপুল/০৩.১১.২০২৩/ রাত ১০.০৩

▎সর্বশেষ

ad