আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাধ্যর্কজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন স্বামীনাথন। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে চেন্নাইয়ে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
স্বামীনাথন তিন কন্যা সন্তান ও অসংখ্য আত্ম-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রী মিনার আগেই মৃ্ত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের ইতিহাসে জটিল একটি সময়ে কৃষি নিয়ে তার কাজের মাধ্যমে লক্ষাধিক প্রাণ বাঁচিয়েছেন এবং দেশের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন।’১৯২৫ সালের ৭ অগস্ট তামিলনাড়ুর কুম্বাকোনামে জন্মগ্রহণ করেন এমএস স্বামীনাথন। তার বাবা এমকে সাম্বাসিভান ছিলেন একজন শল্য চিকিৎসক। সেই সঙ্গে ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীও।
স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকে কৃষিবিজ্ঞানের প্রতি তার গভীর আগ্রহ জন্মায়। ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণা স্বামীনাথনকে কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে আরও উৎসাহিত করে।
কৃষিবিজ্ঞানী না হলে তিনি পুলিশ অফিসার হতেন। একবার এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন স্বামীনাথন। এ জন্য ১৯৪০ সালে পুলিশে চাকরির যোগ্যতাও অর্জন করেছিলেন। সেই সময় তামিলনাড়ু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
ভারতীয় কৃষিতে সবুজ বিপ্লব আনতে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তৎকালীন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী সি সুব্রহ্মণ্যমের এবং পরবর্তী কালে জগজীবন রামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন।
১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্বামীনাথনের যুগান্তকারী কাজ ভারতীয় কৃষিতে সবুজ বিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে দেশে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করতে এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়সম্পূর্ণতা অর্জনে সহায়তা করেছিল।
স্বামীনাথনের প্রচেষ্টায় গম ও ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোর বিকাশ ঘটে। ফলে ভারতজুড়ে খাদ্যশস্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
কৃষিবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে স্বামীনাথনকে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পুরস্কারের অর্থ তিনি ব্যয় করেন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্টান এমএস স্বামীনাথন রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার জন্য। এছাড়া ১৯৭১ সালে তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কার এবং ১৯৮৬ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বিশ্ব বিজ্ঞান পুরস্কার পান।
এছাড়াও লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পুরস্কার ও ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন এই কৃষিবিজ্ঞানী। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার মনোনীত সদস্যও ছিলেন তিনি।
ভারত সরকার তাকে তিনবার পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্বামীনাথন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে একটি যুগের অবসান হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
কিউটিভি/আয়শা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ১১:৩১