
বিনোদন ডেস্ক : বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নিশাত জিয়ার টাকা আত্মসাতের বিষয়ে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন ওমর সানী। অভিনেতা জানান, এই চক্রের প্রতারণার শিকার অর্থাৎ ভুক্তভোগী অনেক পরিবার। সেসব পরিবারের মধ্যে তার পরিবারও রয়েছে।
সময়ের পাঠকের জন্য চিত্রনায়ক ওমর সানীর সেই দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:
‘আমি একজন ভুক্তভোগীর বাবা এবং আমার পরিবার। এই কাজটা আমার ছেলে ফারদিনের সাথে করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আইন এর আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক। ৪০-৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচার। Nishat Zia আপনারা হয়তো MTFE এমটিএফই এবং এরকম আরও অনেক অ্যাপস এর মাধ্যমে প্রতারণার কথা শুনেছেন। তবে আজকে কোনো অ্যাপস নয়, আজকে একজন ভণ্ড প্রতারক এবং অর্থ পাচারকারীর বাস্তব ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
যার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমি, আমার পরিবার এবং আমার চেনা জানা কিছু মানুষ। নিশাত বিন জিয়া রুম্মান, এ ব্যক্তির সাথে আমার পরিচয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। সে নিজেই আমাকে তার বিয়েতে দাওয়াত দেয়। তারপর থেকেই চেনা জানা এবং বিভিন্ন সময় নিশাত নিজে নিজেই তার একটি আইটি ব্যবসার ব্যাপারে আমাকে এবং আমার কিছু বন্ধুদের বলতে থাকেন।
পরিচয় হওয়ার চার মাস পর আমাকে এবং আমার কিছু চেনা পরিচিত মানুষদের সাথে তার একটু বন্ধুত্ব গভীর হওয়ার পরে তিনি আমাদের তার কোম্পানি STASIS GROUP এবং AMAZING FASHIONS LTD এর কথা বলে কিছু নগদ অর্থ ব্যবসায়িক পুঁজি হিসেবে নেয়া শুরু করেন। যদিও পরে জানা যায়, তার কোম্পানির নামে ব্যাংক একাউন্ট দূরের কথা, কোনো বৈধ ট্রেড লাইসেন্সই নেই।
যতদিন এই অর্থ সে ফেরত না দিতে পারেন ততদিনের জন্য তার আইটি SURVEY ব্যবসার উপর ১০% লভ্যাংশ মূল অর্থের সাথে ফেরত দিবেন বলে ওয়াদাবদ্ধ হন। যদিও আমার বেলায় লভ্যাংশ ১০% হলেও কিছু মানুষের জন্য সেই লভ্যাংশ ৩০% দিবেন এবং সেটাও প্রত্যেক মাসে দিবেন বলে বাকি মানুষদের সাথে ওয়াদাবদ্ধ হন। আমার টাকাটা একপ্রকার ব্যবসায়িক লোনই বলতে পারেন।
আরও জানিয়ে রাখি, এইসব লেনদেন যেন বাংলাদেশ সরকারের চোখে না পড়ে তাই লেনদেনগুলো তারা বিটকয়েন অথবা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে করে থাকত। তার প্রমাণ ছবি আকারে আমি দিয়েছি। আরও জানিয়ে রাখি, বিটকয়েন অথবা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেনদেন বাংলাদেশ প্রচলিত আইনে পুরোপুরি অবৈধ এবং একটি গুরুতর অপরাধ। অর্থাৎ যার কাছে যা বলে টাকা নেয়া হয়েছে, তিনি সেভাবেই নগদ অর্থ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে নিয়েছেন।
আমি ধাপে ধাপে তাকে ব্যবসায়িক ইনভেস্টমেন্ট ধার আকারে ২ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেছি। তার বিপরীতে আমি বলেছি যে, আমাকে সিকিউরিটি হিসেবে আমার ইনভেস্টমেন্ট মূল্যের ব্যাংকের চেক প্রদান করতে হবে। সেই চেক প্রদান করে সে আমার থেকে জানুয়ারি ২০২৩ সাল ২ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা বুঝে নেন। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই বিভিন্ন বাহানা শুরু।
প্রথম মাসে আমিসহ সবাইকেই চুক্তি মোতাবেক অর্থ প্রদান করলেও তারপর থেকে শুরু হয় বিভিন্ন বাহানা। আমি আপনাদেরকে আবারও বলে রাখি এটি একটি ব্যবসায়িক চুক্তি, একজন ব্যবসায়ী আরেকজন ব্যবসায়ীর সাথে। অধিক অর্থ লাভ এর লোভে কোনো অ্যাপস বা সফটওয়্যারে কোনো টাকা দেয়া হয়নি। আমিসহ বাকি যারা এখানে ইনভেস্ট করছি, সবাই স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ALM ZIAUL HAQUE সাহেবের ছেলে নতুন ব্যবসা শুরু করবে সেজন্যই করেছি।
যখন এই ছেলে আমাকে এবং অন্যদের টাকা দিতে ব্যর্থ হন তখন তার বাবার সাথে আমরা দেখা করলে তার বাবা এ এল এম জিয়াউল হক আমাদেরকে আস্তে আস্তে টাকা দিয়ে দিবেন বলে জানান। তবে তারপর থেকে গোপন সূত্রে আমি জানতে পারি, তারা সবাইকে একই কথা বলে কিছু সময় সবার থেকে আদায় করে নিচ্ছিলেন। আমার সাথে যখন তার বাবার শেষ দেখা হয়েছিল আমাকে বলেছিল, তিনি পাঁচ দিনের জন্য সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন। পাঁচ দিন পরে এসে আমাকে ফোন দিয়ে মিটিং করবেন। সেই মিটিং আজ পর্যন্ত হলো না। হয়তো ভণ্ড ছেলের ভণ্ড বাবা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এল এম জিয়াউল হক এবং তাদের কোম্পানি amazing fashions limited।
যাই হোক, বিভিন্ন সময় তার কাছে আমার হকের টাকা চাইতে গিয়ে আমাকে এবং আমার অফিসের কর্মচারীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু আমরা যখন আমাদের হকের টাকা তার কাছে চাচ্ছি তখন প্রতারণার পার্টনার তার ভাই সাহিল মুষ্টাভি এবং তার স্ত্রী আফ্রা বাসনিন (যিনি এই পুরো SCAM এর মধ্যে জড়িত) দুবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নিশাত বিন জিয়া প্রতারণা করে অর্থ দুবাই পাচার করে ৩ লাখ দেরহাম, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক কোটি টাকা এক সপ্তাহে ব্যবধানে খরচ করেন। পরে আরও জানা যায়, তিনি প্রতারণার টাকা দিয়ে তার উচ্চবিলাসী জীবন দেখিয়ে গত ৮ মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচার করেছে।
আপনারা এমটিএফই এর ব্যাপারে জানতে পেরেছেন কারণ এমটিএফই একটি অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে মানুষের চেনা জানা অপরিচিত হাজার হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছে। তবে আমি যে কথা বলছি, এটি কোনো অ্যাপ নয়, এটি একজন প্রতারক।
ওই প্রতারক তার বাবার কোম্পানি অ্যামেজিং ফ্যাশন লিমিটেডের সুনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় মানুষের থেকে ৩০ কোটি টাকা বা তারও বেশি টাকা আত্মসাৎ করে বাংলাদেশের বাইরে পাচার করেছেন। যাদের থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তারা সবাই মোটামুটি স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। সবাই এখন প্রত্যেক দিন তাদের অর্থ কীভাবে উদ্ধার করবে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই ভণ্ড প্রতারকের ভণ্ডামি দেখে আমি বুঝে গিয়েছি, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।
তাই আমি গত এক মাস আগে তার প্রদানকৃত সব চেকগুলো নিয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ তার বরাবর প্রদান করি। লিগ্যাল নোটিশ এ উল্লেখ করা আছে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অর্থ পুরোপুরি ফেরত না দিলে আমি চেকের উপরে NI ACT এর মামলা দিতে বাধ্য থাকব। আপনারা হয়তো জানেন, চেকের মামলা একটি সিভিল কেস, কোনো ক্রিমিনাল কেস নয়। আমি ঢাকা ডিবি অফিসে গত এক মাস আগে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ডিবির কাছে।
আমার পাশাপাশি সব ভুক্তভোগীদের আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। অনেকেই এখন মামলা করবে বলে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবাই চেকের মামলা করছে। তবে এটি একটি বিশাল প্রতারণা এবং আমাদের বাংলাদেশ আইনে অর্থ পাচার একটি গুরুতর দেশদ্রোহী অপরাধ। চেক দিয়েছে অর্থ আমাকে প্রদান করতে পারেনি তাই আমি চেকের মামলা দিচ্ছি, কিন্তু এতো প্রতারণা, অর্থপাচার এগুলোর জন্য কী কোনো বিচার হবে না?
অবশ্যই হবে। এতো প্রতারণার পরেও গত এক মাস আগে জানতে পারলাম, একজন তাকে নগদ ৭০ লাখ টাকা ইনভেস্টমেন্ট আকারে দিয়েছে। আমি এবং আমার সাথে যারা আছে তারা হয়তো আজকের এই পোস্ট করার পরে এবং বিভিন্ন লিগ্যাল পদক্ষেপ নেয়ার পরে তাদের অর্থ ফেরত পাব বা আবার নাও পেতে পারি। তবে নতুন করে এই প্রতারকের প্রতারণায় কেউ যেন না পড়ে সেই উদ্দেশ্যেই আজকে এত কিছু লেখা।
ইতিমধ্যে এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি তাদের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির অনেক ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছি। এত বড় একটি প্রতারণা এবং অর্থ পাচারের এই কেসটি গণমাধ্যমে তুলে ধরলে আমার বিশ্বাস নিশাদ বিন জিয়া নামের এরকম আরও অনেক চোর এবং ভণ্ড প্রতারক থেকে মানুষ বাঁচতে পারবে। তার হুন্ডি ওলা অথবা তার অর্থ পাচার করার সাহায্যের মূল হোতা SAHIL MUSTAVI (দুবাই প্রবাসী তবে এখন বাংলাদেশে)। তার সাথে প্রতারণা পরিচালনা করতেন নিশাত বিন জিয়া রুম্মান এবং তার স্ত্রী আফরা বাশনিন।
আজকে তার বাবা মা যদি তাকে সুশিক্ষায় বড় করতেন তাহলে হয়তো তাদের নিজেদের সন্তানের জন্য এই দিন দেখতে হতো না। আমি এতকিছু লিখছি, কারণ আমি চাই শুধু চেকের মামলা নয় প্রতারণা এবং অর্থপাচারের মামলা এই বিষয়টি গণমাধ্যমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং বাংলাদেশ পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ বিষয়টা যেন উঠে আসে। আপনারা কি চান এই ছেলেকে সময় দিতে যেন সে ৩০ না ৩০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অর্থ পাচার করে?’
কিউটিভি/আয়শা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ১০:৩১