
লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : সকাল কিংবা রাত, ঘর কিংবা বাহির যেকোন সময়ে ও স্থানে অনবরত কাশি বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। সর্দি-জ্বর এগুলো তাড়াতাড়ি ভালো হলেও কাশি সহজে ভালো হতে চায় না। এ সমস্যা ভোগায় দীর্ঘদিন।
সাধারত কাশি একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ক্রিয়া যা শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত অস্থায়ী। তবে একটানা কাশি আবার বিরক্তিকর হতে পারে।
কাশি কেন হয়?
সাধারণত ধুলা, ধোঁয়া, দূষণ বা শ্লেষ্মা শরীরে প্রবেশ করার মতো বিরক্তিকর কারণে কাশি তৈরি হয়। এ ছাড়া শ্বাসযন্ত্রের জটিল কোন রোগ যেমন ফুসফুসে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, যক্ষা ইত্যাদি কারণেও কাশি হয়ে থাকে।
এ ছাড়া সাইনোসাইটিস, হাঁপানি, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকেও কাশি হয়।
ধূমপানকারীদের ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফিসেমা। কাশি এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
ভালোমত ঘুম না হলে অনেক সময় কাশি হতে পারে।
নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণে কাশি দেখা যায়।
অ্যালার্জিও অনেক সময় কাশির কারণ হতে পারে। যেমন ধুলা-বালি বা পশুর পশমে কারও অ্যালার্জি থাকলে কাশি হতে পারে।
কাশি বন্ধের ঘরোয়া উপায়
কাশি হলেই হুট করে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টি-বায়োটিক ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলেই কাশি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নিই ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে কাশি দূর করতে পারেন।
১. এসেনশিয়াল অয়েল
কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল বা টি ট্রি তেল ঘাড় এবং নাকের চারপাশে ঘষলে কাশি অনেকাংশে কমে যায়।
ইউক্যালিপটাস তেলের এক্সপেকটোর্যান্ট এবং ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য কাশি, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা এবং অবরুদ্ধ নাক অল্প সময়ের মধ্যে উপশম করে। এ ছাড়া টি ট্রি তেল একটি বহুমুখী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট যা সংক্রমণের চিকিৎসা করার পাশাপাশি গলাকে স্বস্তি দেয়।
২. মধু ও লেবু
মধু মৃদু কিন্তু কার্যকর কাশি উপশমকারী। এতে বিদ্যমান ডিমুলসেন্টি তাৎক্ষণিভাবে অবিরাম কাশি থেকে মুক্তি দিতে পারে। এ ছাড়া লেবুর রসে থাকা ভিটামিন সি সংক্রমণ থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। এই মিশ্রণটি শিশুদের কাশি থেকে মুক্তি দিতেও ব্যবহার করা হয়। এক কাপ উষ্ণ গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
৩. মধু এবং দারুচিনি
দারুচিনি এবং মধুর সংমিশ্রণ কাশির জন্য একটি যাদুকরি ওষুধ। এটি সাইনাস পরিষ্কার করে এবং সংকুচিত শ্বাসনালীর প্যাসেজগুলিকে প্রশমিত করে। মধুকে ভালো করে গরম করে তার মধ্যে দারুচিনি গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পান করুন। এই মিশ্রণটি শিশুদের জন্য অনেক নিরাপদ এবং শিশুরা এর স্বাদ ও পছন্দ করে।
৪. আদা, পুদিনা, এবং মধু
আদার একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান। মধুর সাথে আদা গ্রহণ করা হলে এটি প্রাকৃতিক ব্যথানাশক এবং কাশি উপশমকারী হিসাবে কাজ করে। এ ছাড়া পেপারমিন্ট একটি অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট যা গলায় এবং সাইনাস প্যাসেজে চুলকানি কমায়। এছাড়া আদা চা পান করলে কাশির কারণে অনুভূত গলা জ্বালাপোড়াও দূর হয়।
এক কাপ গরম পানিতে এক কাপ মধু, আদা কুচি ও শুকনো পিপারমেন্ট মিশিয়ে ততক্ষণ সেদ্ধ করুন যতক্ষণ না অর্ধেকে নেমে আসে। মিশ্রণটি একটি বায়ুরোধী পাত্রে প্রায় তিন সপ্তাহের জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। প্রতি ৩-৪ ঘন্টায় এক চা চামচ করে মিশ্রনটি পান করুন।
৫. আনারসের রস
আনারসের রসে উপস্থিত ব্রোমেলেন কাশি, শ্বাস নালীর প্রদাহ এবং নাকের শ্লেষ্মা কমাতে কার্যকরি ভূমিকা রাখে। এক কাপ আনারসের রসের মধ্যে আধা চা চামচ মধু ও অল্প লবণ এবং এক চিমটি কালো গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন।
৬. ভেষজ চা
ভেষজ চা কাশির জন্য শীর্ষ প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি। কাশি উপশমে ওরেগানো চা, লিকোরিস রুট চা বা হিবিস্কাস চা অনেক উপকারি। ওরেগানোতে থাকা থাইমল কফ এবং শ্লেষ্মা দূর করে। লিকোরিস রুটে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য কাশি কমায় এবং হিবিস্কাস চা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের সাথে লড়াই করে এবং কাশি কমায়।
৭. কাঁচা পেঁয়াজ
পেঁয়াজ আশেপাশে উপস্থিত যে কোনও জীবাণুকে মেরে ফেলতে কার্যকর। এতে থাকা ফসফরিক অ্যাসিড রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং কাশি-সৃষ্টিকারী ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। কাশি কমাতে কাঁচা পেঁয়াজ স্লাইস করে কেটে পায়ের নীচে রাখুন এবং মোজা দিয়ে ঢেকে দিন। এটি রাতে ঘুমানোর আগে করলে উপকার পাওয়া যায়।
কিউটিভি/অনিমা/১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ১১:৪৩