শাহনাজ পারভীন মিতা’র জীবনের গল্পঃ বন্ধু রক্সি

superadmin | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ - ১০:৪৪:৩৯ পিএম

বন্ধু রক্সি
———-
জীবন বসন্ত পঞ্চাশ পার করে এসেছি অনেক আগেই . মধ্য পঞ্চাশের দিকে পা দিবো । যখন ছোট ছিলাম ভাবতাম পঞ্চাশ মানেই জীবনের উচ্ছ্বাসগুলো সব মরে যায় কিন্তু বাস্তব জীবনে দেখলাম পরিপক্কতা সেটা সময়ের হোক বা মনের সেটা জীবনকে নতুন করে চিনতে শেখায়, বাঁচতে শেখায় নতুন উদ্দেমে এই কঠিন পৃথিবীর বুকে ।আর বিশেষ করে বন্ধুত্বের বন্ধন সে তো রজনীগন্ধা ফুলের মতই শুধুই ভালোবাসার সুবাস ছড়ায় ।

এবার আমেরিকা সফরে ভার্জিনিয়া রেখা আপার বাসায়ই আমার থাকবার কথা ,তার মাঝে ফেন্সি আপা মাশকুর ভাইও ফ্লোরিডা থেকে আসবে আমার সাথে সময় কাটাতে ।৮৩ ঘনিষ্ট বন্ধু রক্সিকে জানালাম আমি আসছি ভার্জিনিয়া । ও শুনে বারবার আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আমি কবে আসছি , ওর বাসায় কবে যাবো ইত্যাদি । এর ভিতর আমি যখন নিউয়র্ক ,তখন আমাকে জানালো ওটা লং উইকএন্ড লেবার ডের ছুটিসহ তিনদিন বন্ধ আমেরিকা জুড়ে তাই আমাদের বন্ধু মেহেদি ওর বউ মুক্তাসহ আসছে ওয়েস্ট পামবিচ থেকে । গতবছর আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম ওয়েষ্ট পামবিচে মেহেদি ও মুক্তার বিশাল সুন্দর লেকের পাড়ে অপূর্ব নান্দনিক শোভামন্ডিত গাছপালা ঘেরা বাড়ীতে আর ওদের অসাধারন আতিথেয়তা ভুলিনি এখনও । আরো আসছে বন্ধু রুমা জর্জিয়া থেকে দুলাভাই সহ আর ভার্জিনিয়াতে রক্সি ও ওর বর ওমায়িক ভালো মনের মানুষ আনোয়ার ভাই , দিলদরিয়া বন্ধু ফজলু ওর মিষ্টি বউ , সেন্টু , মিরু সবাই তো আছেই । আমি যেদিন ভার্জিনিয়া নামবো সেদিন হটাত রেখা আপারা আউট অফ সিটি বেড়াতে যাওয়াতে আমি রক্সিকে বললাম তুই আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক করতে পারবি ? ও তো মহাউৎসাহে রাজী হলো কিন্তু খুব দুঃখপ্রকাশ করলো আমি আর একদিন আগে আসলেই ওদের সবার সাথে বাইরে ঘুরে আনন্দ করতে পারতাম । আমারও কষ্ট লাগলো কিন্তু সব কিছু তো সবসময় প্লান করে হয় না তাই বললাম ইনশাল্লাহ আগামী বছর চেষ্টা করবো ।

রক্সি আমার ৮৩ গ্রুপের ঘনিষ্ট বন্ধু গতবার ভার্জিনিয়া সফরের সময় প্রথম দেখা আমাদের । তার আগ থেকেই পরিচয় ওর সাথে ,রক্সির অনেক বন্ধুই আমার কমন বন্ধু কিন্তু আমরা একই স্কুল কলেজে পড়ি নাই । এবার ও গাড়ি চালিয়ে একাই চলে এলো এয়ারপোর্ট আমাকে রিসিভ করতে । কি যে আনন্দ হলো যখন দুই বন্ধু একসাথে এয়ারপোর্ট থেকে ওর বাসার উদ্দেশ্য গাড়িতে রওয়ানা দিলাম , ডিসি পার হচ্ছি আর মনে হচ্ছিলো আমাদের বন্ধুত্বের উচ্ছাস ভালোবাসা উড়ছে আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির সুউচ্চ মনুমেন্ট ছুঁয়ে আকাশে বাতাসে ।

এ এক অন্য অনুভূতি অন্যরকম ভালোবাসা । কারন আমি খুব অল্পবয়সে সংসার জীবনে প্রবেশ করেছিলাম এবং তারপর কঠিন জীবনযুদ্ধ ও তখন এখনকার মতো ইন্টারনেটের যুগ ছিলো না , ছিলো না কোনো ফেসবুক । তাই ছেলেবেলার বন্ধু বা স্কুল কলেজের কোনো বন্ধুর সাথে যোগাযোগ ছিলো না বলতে গেলে । আমার ফেসবুক আমার বাচ্চারা ওপেন করে দিয়েছে ২০১৫ সালে । তারপর ২০২০ সালে করোনা মহামারীর ভিতর বন্ধু মিঠুর সৃষ্টি বন্ধুগ্রুপে যোগদান এবং সাড়া পৃথিবীর সমবয়সি বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ।গ্রুপে লেখালেখি ও মডারেটর হিসাবে কাজ করবার কারনে আস্তে আস্তে একজন লেখক হিসাবে নিজেকে বন্ধুদের উৎসাহে দেখতে পাওয়া বাংলা কবিতার রাজ্যে । সত্যি এ এক পরম পাওয়া ও বিস্ময় জীবনের । জীবনের এই প্রদোষ তীর্থে রঙধনুর দেখা পাবো তা কখনও ভাবি নাই ।

রক্সিকে যত কাছ থেকে দেখেছি ততই মুগ্ধ হয়েছি । বন্ধু গাড়ি চালিয়ে নিতে এসেছে এয়ারপোর্ট ।যদিও আমেরিকায় সবাই গাড়ি চালায় যেহেতু বাংলাদেশে আমরা মেয়েরা তা করি না তাই আমার কাছে গাড়ি Drive করা অনেক কঠিন মনে হয় ।যদিও আমার ছেলে বলে আম্মু ,আমেরিকায় থাকলে অবশ্যই তোমাকে Drive শিখতে হবে , যদিও আমি শুনে চুপ করে থাকি আর মনে মনে ভাবি আমি মনে হয় কখনও পারবো না রাস্তায় গাড়ি চালাতে ! তারপরও সময় বলে দেবে কি হবে । আমার ননাস ফেন্সি আপা বাংলাদেশ থাকতে উনাদের বাসা শ্যাওড়াপাড়া থেকে আমার বাসা ফার্মগেট আসতে ভয় পেতো,সেই মানুষ যখন আমাকে সবসময় আমেরিকার ফ্লোরিডা সফরের সময় অনবরত আমাকে পাশে বসিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে রাত বিরাতে আটলান্টিক মহাসাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের কোল ঘেসে অপূর্ব সুন্দর ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ,তখন আমি বিস্মিত ও মুগ্ধ । ছেলেরা তো গাড়ী ড্রাইভ করে সবসময় এর ভিতর আমার পাশে ড্রাইভার হিসাবে যখন মেয়েরা থাকে আমি মুগ্ধ হই বেশী । সেটা আমার জা ও ছোটবোন টেম্পার শেলীর ক্ষেত্রেও হয়েছি সবসময় । আমি ফেন্সি আপা ও শেলি যখন একসাথে টেম্পা বে তো বা কোনো শপিংমলে আনন্দ করে ঘুরে বেড়িয়েছি তখন খুব ভালো লেগেছে , মাথার উপর নীল আকাশ দুইপাশে সাগরের নীলজলরাশি ও পাশে প্রিয়জন এই ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই ।

রক্সি আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে ওর বাসায় নেবার পথেই বললো ,ওর বাসায় ফজলু ,মেহেদি ও রুমা পরিবার সহ রাতে ডিনার করবে । ঘরে ঢুকেই যেনো মা দুর্গার মত ওর দশ হাত গজালো মুহূর্তেই চটপটি ,ফুসকা মোগলাই পরাটা , বিরিয়ানী , গরু ও খাশি , লুচি ভেজিটেবল ও বোরহানি দিয়ে টেবিল সাজিয়ে ফেললো । এর ভিতর প্রথমেই ঢুকলো রুমা ওর হাসবেন্ড সহ । খুব ভালো লাগলো বন্ধু রুমাকে কাছ থেকে দেখে কারন গ্রুপে রুমার লেখার একজন মুগ্ধ পাঠক আমি । এর ভিতর মেহেদি মুক্তা ও ফজলু ওর বউসহ উপস্হিত হলো হৈ হৈ করতে করতে । সত্যি বন্ধুত্বের মত নিস্বার্থ বন্ধন আর কোনো কিছুতেই নেই । এর মধ্যে রক্সির বর আনোয়ার ভাই ছেলেকে ডর্মে রেখে ফিরে আসার পর আড্ডা আরো জমে উঠলো । পরদিন সকালে ভাস্তিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দেবার জন্য একজন ফুপু হিসাবে রক্সির চমৎকার আয়েজন দেখে মুগ্ধ হলাম । তারপর Bay side এ আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ালো আনোয়ার ভাইসহ । বাইরে প্রচন্ড গরম থাকাতে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসতে হলো । তারপর রেস্ট করে রাতের বেলা রক্সিকে বললাম ,চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি । ডিনার করে দুই বান্ধবী ১১ টার সময় মেরিল্যান্ড চলে গেলাম MGM ন্যাশনাল হারবার হোটেল ও ক্যাসিনোতে । জীবনে কখনও ক্যাসিনো দেখিনি , খুব সুন্দর ডেকোরেশন করা ক্যাসোনোর বাইরে হোটেলের লবি । ওখানে দুই বান্ধবী অনেক ছবি তুললাম তারপর রক্সি বললো ক্যাসিনোর ভিতর ঢুকবি ? আমি বললাম চল ঢুকি ভিতরে কেমন করে সবাই খেলে দেখি সামনে থেকে । এর ভিতর টুইংকেল ফোন দিলো আম্মু কোথায় তুমি ? তখন বললাম ক্যাসিনোতে এসেছি মেরিল্যন্ডে । তখন মেয়ে হেসে আমাকে বললো ,দেখো আবার বেশী কিছু হেরো না যেনো । আমি মনে মন চিন্তা করলাম আমার আম্মা যেনো কথা বললো । তারপর গিয়ে একটা একদম সহজ যে খেলা ওখানে ৫ ডলার দিয়ে খেলা শুরু করলাম । কয়েকবার জিতলাম তারপর পুরা ৫ ডলার হেরে জীবনের প্রথম ক্যাসিনোর অভিজ্ঞতা নিলাম । তারপর দুই বান্ধবী খুশীতে হাসতে হাসতে অন্যদের খেলা দেখলাম কিছুক্ষন দাড়িয়ে । তারপর বের হয়ে বাইরে খোলা আকাশের পানিতে ঝর্ণার অবিরাম নৃত্য দেখলাম । হয়ত জীবনটা সহজ নয় অনেক চড়াই উৎড়াই থাকে জীবনের পদে পদে তবে মুখে হাসি ফোটাতে পারে কিন্তু একজন মানুষই সে হলো বন্ধু। আবার দেখা হবে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই সুন্দরী ও সুন্দর মনের বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম একরাশ মুগ্ধতা ও ভালোবাসা হৃদয় গভীরে ধারন করে, যে ভালোবাসার অন্বেষণে আমরা সবাই এই পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছি অহর্নিশ।

 

লেখিকা পরিচিতিঃ লেখিকাঃ শাহনাজ পারভীন মিতা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পরিচিত মুখ। ফেসবুকের টাইমলাইনে মাঝে মাঝে ঝড় তুলেন মিতা। জীবনের খন্ড চিত্র আঁকতে পারদর্শিনী শাহনাজ পারভীন মিতা ফেসবুক গ্ৰুপ মেইন্টেইন করেন সহপাঠিদের নিয়ে। এবারের বইমেলা ২০২৩ এ তাঁর কাব্যগ্রন্থ কাব্যপ্রেমী পাঠকদের মাঝে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।

 

 

নাহিদা /০৭.০৯.২০২৩/ রাত ১০.৪০

▎সর্বশেষ

ad