দূতাবাসে পদায়ন চাইবে পুলিশ

Anima Rakhi | আপডেট: ০৩ জানুয়ারী ২০২৩ - ১২:৫৩:২১ পিএম

ডেস্ক নিউজ : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও গত চার বছরে বাস্তবায়ন হয়নি দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন। দফায় দফায় পুলিশ সদর দফতর থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হলেও রহস্যজনক কারণে তা আলোর মুখ দেখছে না। অন্যদিকে পুলিশের গ্রেড-১ পদ নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং আরও ১৮টি অতিরিক্ত আইজিপি পদসহ একগুচ্ছ দাবি উত্থাপন করবে পুলিশ। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে পুলিশ আছে জনতার পাশে’ স্লোগানে আজ থেকে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সামনে এসব দাবি উত্থাপন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। 

জানা গেছে, ২০১৮ সালের পুলিশ সপ্তাহে দূতাবাসগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তা পদায়নের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে আশ্বস্ত করেন। সে অনুসারে পুলিশ সদর দফতর এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বিষয়টি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৯ সালের পুলিশ সপ্তাহেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভায় বিষয়টি পুনরায় উত্থাপিত হয়। স্বরাষ্ট্র সচিবকে ওই নির্দেশের বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বিদেশি দূতাবাসগুলোতে আমি একজন করে অফিসার দেওয়ার কথা বলেছিলাম। আমার ধারণা ছিল যে অফিসারটা আমাদের এসবি থেকে যাবে, অর্থাৎ পুলিশ থেকেই যাবে। কিন্তু পাঠানোর সময় পাঠানো হলো সব প্রশাসন থেকে। এটা কেন করা হলো আমি জানি না। এখানে আমাদের সচিবসহ সবাই আছেন। আমি যেটা মনে করে বলেছিলাম, একটা লোক বিদেশে থাকেন তার পাসপোর্টটা দিতে হবে সেখানে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না বা এ তথ্যগুলো কে দিতে পারবেন, এটা পুলিশ বা এসবির লোক দিতে পারবেন।’

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেবল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রফেশনাল জেলাসির কারণেই দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলে দেওয়ার পরও এর বাস্তবায়ন না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে তাদের পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য তারা আমাদের পুলিশের সঙ্গে কন্টাক্ট করেন। কারণ একজন পুলিশ অন্য পুলিশের ভাষাটা খুব সহজে বোঝেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়টি বিবেচনায় এনে এর সুরাহা দ্রুত প্রয়োজন।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নাগরিকরা বসবাস করছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৬০টির বেশি দূতাবাস ও মিশন রয়েছে। কোনো কোনো দেশে দূতাবাসের কার্যক্রম রয়েছে একাধিক শহরে। এসব দূতাবাস ও মিশনে অ্যাম্বাসেডর বা হাইকমিশনারের অধীনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অ্যাডমিন বা ইকোনমিক ক্যাডারসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের আইনি সমস্যায় পড়েন। এর বাইরে বিদেশে বসে বাংলাদেশের কিছু নাগরিক দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। অপরাধের বহুমাত্রিকতার কারণে বিদেশে বসে সাইবার ক্রাইম সংঘটিত করছে অনেক অপরাধী। একের পর এক মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার প্রবাসীরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য প্রায়ই নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে পুলিশ সদস্যদের ডেপুটেশনে রাখা হলে প্রবাসীরা উপকৃত হবেন, রাষ্ট্রও উপকৃত হবে। পলাতক সন্ত্রাসী বা বিদেশে থেকে অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে পুলিশ সদর দফতরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সহজ হবে। এসব বিষয় উল্লেখ করে দুই দফা প্রস্তাবনা পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তবে রহস্যজনক কারণে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দূতাবাসগুলোতে অ্যাম্বাসেডর বা হাইকমিশনারের নিচে মিনিস্টার, কনস্যুলার, প্রথম সেক্রেটারি, দ্বিতীয় সেক্রেটারি ও তৃতীয় সেক্রেটারি পদমর্যাদার লোকজন থাকেন। এ ছাড়া কনস্যুলার সার্ভিস, ইনফরমেশন বা লেবার কাউন্সিলর পদেও লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়। দূতাবাস বা মিশনে অ্যাম্বাসেডরের নিচেই সাধারণত পররাষ্ট্র ক্যাডারের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর বাইরে অন্যান্য পদের কোনো একটিতে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। পুলিশের একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, ‘দূতাবাস বা মিশনগুলোতে সহকারী পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদা পর্যন্ত কর্মকর্তাদের প্রেষণে পাঠানো হতে পারে। কারণ দূতাবাসে যে ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে তাতে পুলিশ সুপারের ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়াটা সমীচীন হবে না।’ তবে একই পদমর্যাদার আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘দূতাবাসের কার্যক্রম বিবেচনা করে যেখানে যুগ্ম-সচিব বা সহকারী সচিব পদমর্যাদার লোক প্রয়োজন, সেখানে সেই পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া দরকার।’

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রী সশরীর পুলিশ সপ্তাহে আসছেন এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের সংবাদ। প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই পুলিশের বিষয়ে আন্তরিক। তার দেওয়া সব আশ্বাস এবং নির্দেশের বিষয়গুলো পুলিশ সদর দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বয় করছে। আমাদের প্রত্যাশা অর্থনৈতিক মন্দা কেটে গেলে সব সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

আরও যেসব দাবি উঠবে : পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশে আইজিপি ছাড়া গ্রেড-১ পদ মাত্র দুটি। তাও বর্তমানে গ্রেড-১ কর্মকর্তা হিসেবে কেবল আইজিপিই আছেন। অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের জন্যই কমপক্ষে ১০টি গ্রেড-১ পদ দেওয়ার দাবি উঠবে। ২ লাখ ১০ হাজারের এই বাহিনীর বর্তমানে ২২টি অতিরিক্ত আইজিপির পদ রয়েছে। তবে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কমপক্ষে আরও ১৮টি পদ দরকার। একই সঙ্গে অন্যান্য সংস্থায় পদোন্নতি যতটা সহজতর, সে ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীতে ততটাই জটিলতর। এর দ্রুত সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে। সূত্র আরও বলছে, প্রায় সাত বছর ধরে ‘স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ’ করার দাবি করা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। এর বাইরে নারী পুলিশের জন্য পৃথক ট্রেনিং সেন্টার, স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স স্থাপন, গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণসুবিধা, আলাদা মেডিকেল কোর গঠনের দাবি জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছিল তিন বছর আগের পুলিশ সপ্তাহে। কিন্তু এ প্রস্তাবগুলো এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আলোর মুখ দেখেনি জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো, যানবাহন প্রাধিকার প্রদান, মামলাজট নিরসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারা দেশে যে কমিটি করা হয়েছে তা বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন, জাতির পিতার সমাধিসৌধের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ফোর্স গঠনের প্রস্তাবও।

সূত্র :বাংলাদেশ প্রতিদিন

কিউটিভি/অনিমা/০৩ জানুয়ারী ২০২৩/দুপুর ১২:৫৩

▎সর্বশেষ

ad